এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥
হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ অমান্য করে কক্সবাজারের চকরিয়া ফুলছড়ি বালু খাল ইজারার দেয়ার পায়তারা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব শাখা থেকে এই পায়তারা করা হচ্ছে। জনমনে চাপা ক্ষোভ রিবাজ করছে। ওই খালের বালুর মহাল ইজারা বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে ২২ মার্চ জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন দিয়েছে এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, চকরিয়া খুটাখালী ফুলছড়ি ও কক্সবাজার সদর উপজেলার জৈন্নাকাটার মধ্যবর্তী ফুলছড়ি খালের বালুর মহালটির অবস্থান। ওই খালের দু’পাড়ের বসতবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাফেজখানা, এতিমখানা ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। খালের দু’পাড়ের রাস্তা দিয়ে জুমনগর, জৈন্নাকাটা গ্রাম ও সামাজিক বনায়ন এলাকার সহস্রাধিক লোকজন নতুন অফিস বাজারে এবং স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা চলাচল করে আসছে। ইতোপূর্বে ওই খাল ইজারা নিয়ে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী লাভবান হলেও স্থানীয় জনগণের জানমালের ক্ষতি হয়েছে বেশি। ইজারার বালি উত্তোলণের ফলে পাড় ভেঙ্গে যাওয়ায় উক্ত স্থানের দুটি গাইডওয়াল ও পূর্বের ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ে। বর্তমানে দুটি গাইডওয়ালের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে বিলিন হয়ে গেছে এবং অপর গাইডওয়ালটিও ফাটল ধরেছে।
এবছরও ওই খালের বালু মহাল ইজারা দেয়া হচ্ছে জেনে ঘুম হারাম হয়ে গেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। দুই উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়ন, ফুলছড়ি মৌজার জৈন্নাকাটা গ্রাম ও ইসলামপুর ইউনিয়নের জৈন্নাকাটা এলাকার বাসিন্দারা এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে পড়েছে। গত ১৬ এপ্রিল ওই বালুমহাল ইজারা প্রদানে দরপত্র আহবান করে জেলা প্রশাসন।
এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের সওদাগর, রফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম, কালাসোনা, রমজান আলী সরকার, ওসমান আলী, জসিম উদ্দিন, আবদু শুক্কুর, ইমাম শরীপ, মোজাম্মেল হক বরৈন, ফুলছড়ি খালের দুই পার্শ্বে ফুলছড়ি মৌজার ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি প্রতিবছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দাবি করে বলেন, ফুলছড়ি খালে দু’টি গাইড ওয়াল দেওয়া আছে। খালপাড়েই গড়ে উঠা চলাচলের রাস্তা, বসতবাড়ি, মসজিদ, ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, কবরস্থান, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সামাজিক বনায়ন হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়া গাইড ওয়াল দু’টি ও নবনির্মিত জৈন্ন্যাকাটার নবনির্মিত ব্রিজটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ফুলছড়ি এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান চৌধুরী শাহীন ও ইমাম শরীফ বলেন, ফুলছড়ি খালে শুষ্ক মৌসুমে ১০-১৫টি রিং বাঁধ দিয়ে পানি জমিয়ে কয়েক হাজার একর জমিতে চাষাবাদ করে আসছে বহু কৃষক। খালপাড়ের জমিমালিক নুরুল আলম, ইমদাদুল হক বলেন, ইতোপূর্বে ফুলছড়ি খাল হতে বালু উত্তোলনের কারণে খালপাড়ের উত্তর পার্শ্বস্থ রাস্তাটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। খালের দু’পাড়ের স্থান গভীর হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানের বেড়িবাঁধ বিধবস্ত হয়ে খালের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে বহু ব্যক্তির মালিকানাধীন জমি। এই বালুখালের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করে মহামান্য হাইকোর্টে করা রীটপিটিশ নং-৩৩৮৩/২০১৫ইং হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গত বছরের ১২ এপ্রিল ইজারার উপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এর পর আরো দুই বার স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। সর্বশেষ বিচারপতি কাজি রেজাউল হক ও বিচারপ্রতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানেরর গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ গত ৭ ডিসেম্বর ২০১৫ইং হতে ৭ জুন ২০১৬ইং পর্যন্ত আগের স্থাগিতাদেশ বলবৎ রাখা হয়।
এদিকে, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকার পরেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় রাজস্ব শাখা হতে গত ১৬ মার্চ স্থানীয় দৈনিকে ফুলছড়ি বালুখাল ইজারার জন্য দরপত্র আহবান করা হয় (স্মরক নং- ০৫-২০-২২০০-১২৮-২০-০১/২০১৬)। এঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর রীটপিটিশনকারী ডাঃ আবদুল কুদ্দুচ মাখন গত ২২ মার্চ ( রীট পিটিশন নং-৩৩৮৩/২০১৫ইং এর আদেশ মুলে ফুলছড়ি খাল ইজারা কার্যক্রম পরবর্তী ৬ মাসের জন্য বলবৎ রাখার আবেদন করেন ( স্মারক নং-৫৩০/০১৬)। ওই খালটি আবারও ইজারা দেয়া হলে সহস্রাধিক একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকাসহ এতে ফসল উৎপাদন কাজে মারাত্মক ব্যঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। রাস্তাঘাট বিলীন, ফসল ও সামাজিক বনায়ন বিনষ্টসহ দুই এলাকার লোকজনের সহায় সম্বল ও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। এলাকাবাসির ক্ষয়ক্ষতির কথা বিবেচনা করে ফুলছড়ি বালুখাল ইজারা কার্যক্রম বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে এলাকাবাসি আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
পাঠকের মতামত: